Madhyamik class 10th Bangla Rachana Bigyaner Agragati – Paribesh Sanrakshan
Bigyaner Agragati
o Paribesh Sanrakshan – Bangla Rachana
o Paribesh Sanrakshan – Bangla Rachana
বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ – বাংলা রচনা | Bigyaner Agragati
o Paribesh Sanrakshan – Bangla Rachana
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা :
আগুনের গোলক থেকে পৃথিবী গড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই জন্ম হয়েছিল প্রকৃতি ও পরিবেশের । ঠিক একইসময় হয়তো বিজ্ঞানেরও সূচনা হয়েছিল । তবে পাথরে পাথরে ঘর্ষণের মাধ্যমে উৎপন্ন আগুনের বিচ্ছুরণের মধ্য দিয়েই আদি মানবের কাছে বিজ্ঞানের আত্মপ্রকাশ আর তখন থেকেই মানুষের হাত ধরে শুরু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পথচলা । এ পৃথিবীর বক্ষজুড়ে প্রকৃতি তার সৌন্দর্য বিছিয়ে রেখেছে । ঠিক তেমনভাবেই প্রকৃতির নাড়ির মধ্যে যেন লুকিয়ে আছে নানান বৈজ্ঞানিক সম্ভাবনা । এমনই বিভিন্ন জ্ঞান এবং সম্ভাবনার সঙ্গে মানুষের প্রথম সাক্ষাৎকারের পর পেরিয়ে গেছে অনেক বছর । ধীরে ধীরে মানুষ , প্রকৃতির মধ্যে প্রচ্ছন্ন বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সূত্রের যেমন খোঁজ পেয়েছে , তেমনই প্রযুক্তির জগতেও সে অসাধ্যসাধন করেছে । গ্যালিলিয়ো – নিউটনের যুগ পেরিয়ে আইনস্টাইন , জগদীশচন্দ্র বসু কিংবা সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রমুখের মতন অসামান্য প্রতিভাধর বৈজ্ঞানিকদের উদ্ভাবনী কৌশল এবং মৌলিকতার জোরে মানুষ ঘোষণা করেছে মেধা ও মননের জয়ধ্বনি । শতসহস্র রকমের যন্ত্র ও পণ্য আবিষ্কারের ফলে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি আজ স্পর্শ করেছে উন্নতির শিখর । দৈনন্দিন জীবনে , শিক্ষায় , চিকিৎসায় নব নব উদ্ভাবন পৃথিবীকে এনে দিয়েছে হাতের মুঠোয় । মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে টিভি , কম্পিউটার , ফোন । এখনকার দিনে প্রযুক্তির কল্যাণেই সাতসমুদ্র – তেরো নদীর গণ্ডি উপেক্ষা করে । মানুষ এক নিমেষে পৌঁছে যেতে পারে অপর প্রান্তের মানুষের কাছে , এমনকি গ্রহ থেকে গ্রহান্তরেও মানুষ বিস্তার করেছে নিজের প্রভুত্ব । এভাবেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা যেমন নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছে , তেমনভাবে অন্যদিকে গোগ্রাসে গিলতে শুরু করেছে পরিবেশ ও প্রকৃতিকে । ক্ষমতালোভী স্বার্থান্বেষী মানুষের ঘৃণ্য বেহিসেবি আস্ফালনে অরণ্য – জনপদ – সভ্যতা যেমন বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির ধ্বংসাত্মক রূপকে প্রত্যক্ষ করেছে , দেখেছে মনুষ্যত্বের অপমৃত্যু তেমনই প্রতিমুহূর্তে এর অপব্যবহারের ফলে তিলে তিলে দুষিত ও বিষাক্ত হচ্ছে পৃথিবী । পায়ে পায়ে এগিয়ে চলেছে ভয়াবহ এক ভবিষ্যতের দিকে ।
বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ ও বিপন্ন পরিবেশ :
আমরা সবাই জানি বাতাস এবং অক্সিজেন ছাড়া আমাদের জীবন অচল । মানুষ খাবার ছাড়া কয়েক সপ্তাহ বেঁচে থাকতে পারে । জল না খেয়েও কিছুদিন প্রাণধারণ সম্ভব । কিন্তু বাতাস তথা অক্সিজেন ছাড়া কয়েক মিনিটও বেঁচে থাকা সম্ভব নয় । কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির নাম করে আজ আমরা এই পৃথিবীকে যেখানে এনে দাঁড় করিয়েছি , সেখানে প্রতিনিয়ত সংগত কারণেই প্রশ্ন উঠছে , বাতাস দুষিত করে আমরা নিজেরাই নিজেদের প্রাণসংশয়ের কারণ হয়ে উঠছি । না তো ? আমাদের পৃথিবীর অপূর্ব জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংস করছি না তো । এই প্রশ্ন কিন্তু এই মুহূর্তে আমাদের পৃথিবীর সামনে সবচেয়ে বড়ো প্রশ্ন হিসেবে সামনে এসেছে । যে হারে দুষণ বাড়ছে তাতে এই পৃথিবীর আয়ু আর কত বছর ? এর উত্তর আমাদের জানা নেই ।
শিল্পবিপ্লব যেমন আশীর্বাদ , তেমনি আধুনিক দুষণের যাত্রাও সেখান থেকেই । কলকারখানায় ও মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে কয়লা , তেল , গ্যাসের ব্যবহার রাতারাতি বেড়ে চলল । বাড়তে থাকল কারখানার ধোয়া । কারখানার বর্জ্যা এসে নদীতে পড়ে জলকে দূষিত করতে শুরু করল । লক্ষ লক্ষ যানবাহন । চলতে শুরু করল আর বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইড , কার্বন মনোক্সাইড মিথেন , নাইট্রাস অক্সাইডের মতো ক্ষতিকারক গ্যাসের উপস্থিতি বেড়েই চলল । গর্ত তৈরি হল স্ট্যাটোস্ফিয়ারের ওজোন গ্যাসের আচ্ছাদনে । সেখান দিয়ে ঢুকতে শুরু করল সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি । পৃথিবীর | তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করল । মেরুর বরফ বেশি করে গলতে শুরু করল । মেরুর বরফগলা বাড়তি জল সমুদ্রে পড়ে ধীরে ধীরে সমুদ্রের জলের উচ্চতা বাড়িয়ে দিতে থাকল । ঠিকই , এসব একদিনে হয়নি । কয়েকশো বছর লেগে গেছে । কিন্তু বিপদ যে – গতিতে এগিয়েছে , মানুষের সতর্ক হওয়ার গতি তার চেয়ে অনেক কম । ফলে বিপদ বেড়েই চলেছে , থেমে থাকেনি । পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলেছেন , সমুদ্রের জলের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার অনেক দ্বীপ ডুবে যাচ্ছে । সুন্দরবনের ঘোড়ামারা দ্বীপের কিছু অংশ এই কারণেই জলের নীচে চলে গিয়েছে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা । পরিবেশদূষণের ফলে আমাদের ঋতুবৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে গেছে । কবি জীবনানন্দের ‘ রূপসী বাংলা ‘ – র আমরা যে হেমন্তের বর্ণনা শুনি , সেই হেমন্তকালকে আজ আর আমরা এই দুষণের বাংলায় চিনতে পারি না । হেমন্ত হারিয়ে গিয়েছে দূষণের অন্ধগলিতে । ‘ এল নিনো ‘ – র প্রতিক্রিয়ায় এখন ভারতে বর্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । কমে যাচ্ছে বৃষ্টির পরিমাণ । যা এসে সরাসরি আঘাত করছে ফসলের উৎপাদনে । বজ্রপাত বেড়ে গেছে । বেড়েছে টাইফুন , সাইক্লোনের সংখ্যা । খবর আসছে অ্যাসিড বৃষ্টিরও । এর সঙ্গেই চলছে বৃক্ষ নিধন । বন কেটে সাফ করে দেওয়া হচ্ছে । হাতি , বাঘ খাবারের অভাবে লোকালয়ে চলে আসছে ।
নানা সংরক্ষণ আইন সত্ত্বেও বহু প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে । কত পাখি নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে শহরের বুক থেকে । মাতৃক্রোড়ে জন্ম হচ্ছে অপরিণত শিশুর । কোন্ পথে চলেছি আমরা , এই প্রশ্ন উঠছে । জল , জঙ্গল , আকাশ , বাতাস , মাটি আমরা প্রতিদিনই দুষিত করে চলেছি নিজ হাতে । প্রকৃতি যখন এর চূড়ান্ত প্রতিশোধ নিতে শুরু করবে তখন আমরা কী জবাব দেব , সেই উত্তর আমাদের জানা নেই । ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা এ কোন্ পৃথিবী রেখে যাচ্ছি , জানা নেই সেই উত্তরও ।
এইভাবেই যদি চলতে দেওয়া হয় , বিজ্ঞানীরা মনে করছেন ২০৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নানা ধরনের দূষণজনিত মড়ক দেখা দেবে । ইতিমধ্যেই বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে , ওজোন আচ্ছাদনে গহ্বর সৃষ্টি হওয়ায় পৃথিবীতে ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেছে । দূষিত জল খেয়ে ভারতসহ পৃথিবীর বহু দেশে মৃতের হার বেড়েই চলেছে।
পরিত্রাণের পথ :
এভাবেই বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে প্রকৃতির প্রচুর ক্ষতি হয়েছে । গাছ কেটে তৈরি হয়েছে নানা ফ্যাক্টরি , মোবাইল ফোনের সিগন্যাল টাওয়ারের জন্যে ক্ষতি হয়েছে বহু পশুপাখির । শুধু তাই নয় , এখনকার সবচেয়ে বড়ো চিন্তার বিষয় হচ্ছে বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং । এর ফলে পৃথিবীর তুষার চূড়ার বরফ গলে যাচ্ছে এবং ফলস্বরূপ পৃথিবীর বুকে জলের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে । পরিবেশের বুকে ক্রমবর্ধমান ভারসাম্যহীন উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিসর্বস্বতায় মানুষ যতই উপকৃত হোক – না – কেন , প্রকৃতি ও পরিবেশের কোনো ভয়াবহ বিপর্যয়ে মানুষের অস্তিত্ব সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে । তাই এই যুগের বিজ্ঞানীরা বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিকে নতুনভাবে গ্রহণ করার চেষ্টা করছেন । বিজ্ঞানের যে – রূপে প্রকৃতি তার সামঞ্জস্য ফিরে পাবে আর মানুষও নিজেদের অগ্রগতির সুবিধা উপভোগ করতে পারবে , সেই প্রযুক্তিরই নাম ‘ ইকো – ফ্রেন্ডলি টেকনোলজি ‘ , অর্থাৎ পরিবেশ ও প্রকৃতির সঙ্গে মিতালি স্থাপন করে মানবসভ্যতার উন্নতি । এর ফলে তৈরি হচ্ছে । নানা ‘ বায়ো – ডিগ্রেডেবল ‘ জিনিস , যেগুলো প্রকৃতির কাছেই আবার ফিরে যেতে পারে । বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার হচ্ছে সূর্যের রশ্মি এবং খোঁজ চলছে । পরিবেশের বিন্দুমাত্র ক্ষতি করে না , এমন বিভিন্ন বিকল্প শক্তির । বিজ্ঞান এবং আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যা নিজের মতো করে পরিবেশবান্ধব হওয়ার চেষ্টা শুরু করেছে । এটাই আশার কথা ।
উপসংহার :
মনে রাখতে হবে পরিবেশ ধ্বংসের আঘাত প্রথমে পড়বে ভারতের মতো জনবহুল গরিব দেশে । ফলে বিশ্বের বিভিন্ন মঞ্চে এইসব উন্নয়নশীল দেশেরই বেশি সক্রিয় হওয়া উচিত । এটা ঠিক , কয়েক দশক আগেও বিপদটা যত ভয়াবহ ছিল , আজ তার থেকে কিছুটা হলেও পরিস্থিতি ভালো হয়েছে । দেশে দেশে পরিবেশ বাঁচানোর কঠোর আইনকানুন প্রয়োগ করা শুরু হয়েছে । তবে সম্পূর্ণ বিপন্মুক্ত আমরা , এমন দাবি করার জায়গা থেকে আমরা এখনও যোজন যোজন দূরে আছি । এই আক্ষেপ ও হতাশা থেকেই কবি জীবনানন্দ লিখেছিলেন , ‘ আমাদের এই শতকের / বিজ্ঞান তো সংকলিত জিনিসের ভিড় শুধু – বেড়ে যায় শুধু ; / তবু কোথাও তার প্রাণ নেই বলে অর্থময় / জ্ঞান নেই আজ পৃথিবীতে ; জ্ঞানের বিহনে প্রেম নেই ।’— অর্থাৎ প্রয়োজন প্রযুক্তি এবং পরিবেশের মধ্যে এক অর্থপূর্ণ মানবীয় সম্পর্কের বন্ধন । একমাত্র মানুষের পক্ষেই বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিকে মানবতায় দীক্ষিত করে পৃথিবী ও পরিবেশকে স্বমহিমায় পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব । আমাদের কখনোই ভুললে চলবে না পরিবেশ ও বিজ্ঞান যেন একই মুদ্রার দুই দিক । তাই উভয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য স্থাপন করেই উন্নতির চূড়ায় পৌঁছোনো সম্ভব । আর একাজে শুধু বিজ্ঞানীরা নয় , সাধারণ মানুষও যদি হাত বাড়িয়ে দেয় এই মেলবন্ধনে , তবেই আগামী দিনে আমরা দেখতে পাব এক সুন্দর পৃথিবীকে ।
*There will be much more sections divided into the above syllabus which will be told in Live Session
You can Purchase our Courses:
- 10th – 12th exam Preparation
- JEE / NET Preparation
- Govt. Job exam Preparation
- Computer Courses
- Engineering Courses
- Govt. Job exam Preparation
- JEE / NET Preparation
The session will be conducted on “Cademy” Mobile App.
Do Subscribe our YouTube Channel for Free Classes: @cademyindia
Contact for any Support : Cademy India Pvt. Ltd.
+91-700-1237600